কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সন্তান জন্মের পূর্বে প্রস্তুতি এবং পরে করণীয়
যারা নতুন মা - বাবা হতে যাচ্ছেন তারা সাধারণত বাজার থেকে শিশুর নামের দুই একটা বই কেনেন কিন্তু শিশুর যত্ন বা লালন - পালন সংক্রান্ত বই কেনেন না । আলহামদুলিল্লাহ বাজারে শিশুর লালন - পালন সংক্রান্ত বেশ কিছু বই রয়েছে । এই বইগুলো গাইনি বিভাগের বা শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা লিখেছেন । আমরাও আমাদের সন্তানের জন্মের আগে সেই একই কাজ করেছি , এই ধরনের দুই একটা বই কিনে নিয়েছি যা আমাদের অনেক কাজে লেগেছে । তবে এই বইগুলো শিশুর লালন - পালনের শুধু একটি দিক নিয়েই আলোচনা করেছে আর তা হচ্ছে মেডিক্যাল বিষয়গুলো । এই বইগুলোর প্রতিটি বিষয় যদি ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত করে লেখা হতো তাহলে নতুন মা এবং বাবারা আরো বেশী উপকৃত হতো । কারণ একজন ডাক্তার যখন ইসলামের রেফারেন্স দিয়ে শিশুর সমস্যার সমাধান দিবেন তখন সেটা হবে পরিপূর্ণ সমাধান এবং মুসলিম পাঠক সেটা খুব গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করবেন । আমরা এই ব্লগে শিশুর লালন পালনের বিষয়গুলো বিজ্ঞান ও ইসলামের সাথে সমন্বয়সাধণ করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি । গর্ভবর্তী মায়ের পড়াশোনা একটি শিশু এসে একটি নারীর জীবনকে ধন্য করে তোলে । একজন নারী আর এক জীবনে পদার্পণ করেন মাতৃস্নেহ নিয়ে প্রকৃত মা সেই , যে সঠিকভাবে সন্তান প্রতিপালন করেন । মা হওয়ার জন্য কেবল জন্মদাত্রী হওয়াই যথেষ্ট নয় বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে যখন একজন নারী প্রেগন্যান্ট হন তখন তিনি এই বিষয়ের উপর কোন প্রকার পড়াশোনা করেন না । কিন্তু বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যাপক । আমাদের দেশে প্রেগন্যান্ট মা শুধু খাওয়া - দাও নিয়েই চিন্তিত থাকেন আর অন্য কোন বিষয় নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না আমরা আগেই দেখেছি যে নর্থ আমেরিকায় প্রেগন্যান্ট মহিলাদের জন্য নানা রকম কোর্স রয়েছে । এই বিষয়ের উপর বাজারে অনেক বই এবং ডিভিডি পাওয়া যায় যা প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগ থেকেই পড়া ও দেখা শুরু করা উচিত । এছাড়া ইন্টারনেটে এ বিষয়ে প্রচুর সাইট রয়েছে যেখান থেকে ঘরে বসেও পড়াশোনা করা যেতে পারে । এতো গেল একজন সাধারণ মায়ের কথা । কিন্তু একজন মুসলিম মায়ের দায়িত্ব অন্যান্য মায়েদের চেয়ে আরো অনেক বেশী । ঐসকল পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি আরো অতিরিক্ত পড়াশোনা করবেন কিভাবে তার সন্তানকে আদর্শ মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলবেন , কিভাবে তার সন্তানের অন্তরে সঠিক দ্বীনের আলো প্রবেশ করবে । সেজন্য প্রয়োজন ইসলামী শিশু সাহিত্য পড়া , আল কুরআনের তাফসীর পড়া , রসুল এর জীবনী পড়া , সাহাবাদের জীবনী পড়া।
এছাড়া এখন প্রচুর ইসলামিক ডিভিডি পাওয়া যায় এবং ইন্টারনেট থেকেও আমরা অনেক ভিডিও দেখার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে পারি । প্রেগন্যান্ট অবস্থায় মায়েরা সাধারণত হাতে অনেক সময় পান বা চাকুরীরত মায়েরা সন্তান জন্মের পর সাধারণত বাসাতেই থাকেন । এই সময়ে মায়েরা ইসলামের উপর পড়াশুনা করে উপযুক্ত জ্ঞান অর্জন করতে পারেন । এতে অনেক মানসিক শাস্তিও পেতে পারেন ।
👉 মায়ের গর্ভে শিশুর শিক্ষা পর্ব
প্রত্যেক মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্য আকারে অবস্থান করে । অতঃপর পরবর্তী চল্লিশ দিন জমাট রক্তে পরিণত হয় । এরপর এমনিভাবে তা আরো চল্লিশ দিনের মধ্যে মাংসের টুকরায় পরিণত হয় । অতঃপর আল্লাহ একজন ফিরিশতাকে প্রেরণ করেন যাকে মানব শিশুটির ব্যাপারে চারটি বিষয় অর্থাৎ তার রিষিক , আয়ুষ্কাল , ভাগ্যের ভালো ও মন্দ সম্পর্কে লিখতে বলা হয় । এরপর উক্ত মানব ভ্রুনের মধ্যে আত্মা ( জীবন ) দিয়ে দেয়া হয় । ( সহীহ বুখারী , সহীহ মুসলিম ) মেডিক্যাল সায়েন্স বলে গর্ভবর্তী হওয়ার পর প্রথম মাসেই শিশুর হৃৎপিন্ড তৈরী হয় এবং গর্ভধারণের দেড় মাসের মধ্যে শিশুর হৃৎপিণ্ড কাজ করতে শুরু করে । পরবর্তী দু'মাসের ভেতর তার হাত - পা এবং অন্যান্য অঙ্গসমূহ তৈরী হয়ে যায় ।
তিন মাস পর থেকে সে ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে এবং পাঁচ মাস বয়স থেকে সে শুনতে পায় । তাই তৃতীয় মাস থেকে মায়ের উচিত আস্তে আস্তে পড়ার পরিবর্তে জোরেজোরে কুর'আন হাদীস পড়া , সুন্দর করে শব্দ করে কুরআন তিলাওয়াত করা । পঞ্চম মাস থেকে গর্ভের সন্তানের সাথে একা একা কথা বলা যেতে পারে , তাকে ভালো ভালো কথা শুনানো যেতে পারে ইত্যাদি । যদি এটা প্রথম সন্তান হয় তবে গর্ভধারণের বিশ সপ্তাহ পর শিশুর প্রথম নড়াচড়া টের পাওয়া যায় । আর প্রথম গর্ভ না হয়ে যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় অথবা আরও পরবর্তী গর্ভ হয় , তাহলে গর্ভধারণের ঘোল থেকে আঠারো সপ্তাহ পরপরই মা শিশুর নড়াচড়া টের পায় । মায়ের গর্ভে সন্তান নাভীর মাধ্যমে খাদ্যগ্রহণ করে তিল তিল করে বড় হতে থাকে । তাই মায়ের চরিত্রের যথেষ্ট প্রভাব সন্তানের উপর পড়ে । কোন মাদ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সলাতে নিয়মিত হয়ে না থাকেন , তাহলে এসময় থেকেই তাকে ( পাঁচ ওয়াক্ত সলাতে নিয়মিত হয়ে যাওয়া উচিত । মায়ের মধ্যে যেসকল দোষ - ত্রুটিগুলো রয়েছে সেগুলো এসময় থেকেই আস্তে আস্তে কমিয়ে নিয়ে আসা উচিত।
📖 চলবে....
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন