ইসলামিক সায়েন্সের আলােকে প্যারেন্টিং

 


চ্যাপটার ১ প্যারেন্টিং কি ও কেন ? প্যারেন্টিং শব্দটি ইংরেজী , এর সারমর্ম হচ্ছে সন্তান প্রতিপালনে মা - বাবার ভূমিকা । প্যারেন্টিং শব্দটির অর্থ ব্যাপক । প্যারেন্টিং মানে খুব ছােট বয়সে শুধু শিশুর লালন - পালন নয় । প্যারেন্টিং হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি যার মাধ্যমে সন্তানের দৈহিক , মানসিক , সামাজিক , অর্থনৈতিক , বুদ্ধিবৃত্তিক এবং ধর্মীয় প্রতিটি দিক দিয়ে শিশুকাল থেকে যৌবন পর্যন্ত শিক্ষা দান । প্যারেন্টিং - এর মূল দায়িত্ব সাধারণত পালন করেন জন্মদাত্রী মা এবং বাবা । কিন্তু তারপরও নিকট আত্মীয় - স্বজন যেমন , বড় ভাই - বােন , খালা - খালু , চাচা চাচী , মামা - মামী , দাদা - দাদী , নানা - নানীরাও প্যারেন্টিং - এর কাজটি করতে পারেন । ইংল্যান্ডের বিখ্যাত পিডিয়াট্রিশিয়ান এবং সাইকোলজিস্ট ডােনাল্ড উইনিকোট বলেছেন , ভাল প্যারেন্টিং - এর অর্থ হচ্ছে সন্তানের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে তার প্রতিটি মুহূর্তের ডেভেলপমেন্টের অর্থাৎ অগ্রপতির বা উন্নতির প্রতি সজাগ থাকা ( সজাগ দৃষ্টি রাখা ) । আমাদের দেশে কোন কোন প্যারেন্ট সন্তানের শুধু মাত্র স্বাস্থ্য ও খাওয়া - দাওয়া নিয়ে চিন্তা করেন । আবার কোন কোন প্যারেন্ট শুধু সন্তানের পড়ালেখা নিয়ে বেশী চিন্তা করেন যেমন , সকালে টিচার , সারাদিন স্কুল , বিকেলে কোচিং , রাতে আৱেক টিচার ইত্যাদি । আবার কোন কোন প্যারেন্ট সন্তানের কোন বিষয়েরই খোঁজ - খবর নেন না , কিন্তু পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হলেই শুরু করেন মারধর , শাস্তি ইত্যাদি । এর কোনটিই ঠিক নয় । প্যারেন্টিং হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা বা complete package . এই প্যাকেজের আওতায় সন্তানের এই দুনিয়ার ভালাে এবং আখিরাতের ভালাের জন্য যা যা প্রয়ােজন তা সবই সম্পৃক্ত । একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে বেশী । গুরুত্ব দেয়া যাবে না । প্যারেন্টিংয়ের ধরণ ও শিশু বিশেষজ্ঞরা প্যারেন্টদেরকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন । যারা সন্তানের ভালমন্দ সবই গ্রহণ করেন তারা হচ্ছেন ইকুয়ালিটেরিয়ান ( equalitarian ) বা সাম্যবাদী প্যারেন্ট । আর যে সকল প্যারেন্ট সন্তানের সব ধরনের খারাপকে খারাপ চোখে দেখেন না তারা হলেন সহনশীল প্যারেন্ট । আর যে সকল প্যারেন্টৱা সন্তানদের ভাল - মন্দ বিষয়গুলাে খুব কড়াকড়িভাবে দেখেন তারা হলেন স্ট্রিক্ট প্যারেন্ট । শিশুদের ধরণ ও শিশু বিশেষজ্ঞরা প্যারেন্টদের মতাে শিশুদেরকেও তিনভাগে ভাগ করেছেন । যে সকল শিশু ভাল - মন্দ দুটিই করে বেড়ায় তারা হচ্ছে নমনীয় শিশু । আর যে সকল শিশু প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মা - বাবাকে খুব সহযােগিতা করে থাকে তারা হলাে সহযােগিতাকারী শিশু । আর যে সকল শিশু একেবারেই মা বাবার কথা শুনে না তারা হচ্ছে অবাধ্য শিশু । 

#প্যারেন্টিংয়ের ধরণ

১/সাম্যবাদী প্যারেন্ট 

২/সহনশীল প্যারেন্ট 

৩/প্রভুত্বসুলভ প্যারেন্ট

৪/অবধ্য শিশু 

৫/নমনীয় শিশু 

৬/সহযােগিতাকারী শিশু  ।

 প্যারেন্টিং শব্দটি আগে আমরা খুব একটা শুনিনি । কানাডা প্যারেন্টিং শব্দটি বহুল প্রচলিত । এই বিষয়ে এখানে কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিগুলােতে বিভিন্ন রকমের শর্ট কোর্স এবং লং কোর্স রয়েছে । তারপর আমাদের মেয়ে জারার জন্ম হওয়ার পর এই বিষয়ে আরাে ভালভাবে জানতে শুরু করলাম । আমরা স্বামী - স্ত্রী প্যারেন্টিং - এর উপর ক্যানাডা এবং আমেরিকা থেকে এধরনের কয়েকটি কোর্সও করেছি । উন্নত দেশগুলােতে এই বিষয়ের উপর খুব জোর দেয়া হয় । উন্নত বিশ্বের প্যারেন্টিং এর কিছু বিষয় আমরা বাংলাদেশে বসবাসরত বাবা - মায়েদের সাথে শেয়ার করতে চাই । আমরা চাই আমাদের বাংলাদেশেও ভবিষ্যতে প্যারেন্টিং এর উপর এই ধরনের সুযােগ সুবিধা এবং সিস্টেম ডেভেলপ হােক এবং চালু হােক । ক্যানাডায় শিশু জন্মের আগে থেকে শুরু হয়ে যায় প্যারেন্টিং কার্যক্রম । ক্যানাডিয়ান সরকারের রয়েছে এ জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ । যেমন প্রিন্যাট্যাল ক্লাস ( মায়ের জন্য ) ডেলিভারি ওরিয়েন্টেশন ( মা এবং বাবা দুজনের জন্য ) ব্রেষ্ট ফীডিং ক্লাস ( মা এবং বাবা দুজনের জন্য ) পােষ্ট ন্যাট্যাল ক্লাস ( মায়ের জন্য ) ডায়েট ক্লাস ( মায়ের জন্য ) প্যাটারনিটি লীভ ( বাবার জন্য ) ডে - কেয়ার ( বাচ্চার জন্য ) প্রি - স্কুল ( বাচ্চার জন্য ) প্রিন্যাট্যাল ক্লাস  ঃ এই ক্লাসটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য । এখানে শেখানাে হয় যে শিশু জন্মের আগে মা কি কি করবে , কিভাবে চলবে , কি কি সাবধানতা অবলম্বন করবে ইত্যাদি । ডেলিভারি ওরিয়েন্টেশন ও শিশু যে হসপিটালে ডেলিভারি হবে সেখান থেকে ডেলিভারি তারিখের এক - দুই মাস আগে হসপিটাল ভিজিট করার জন্য এপয়েন্টমেন্ট দেয়া হয় । সেদিন মা এবং বাবা দুজনকেই হসপিটালের দরজা থেকে শুরু করে রিসেপশন , ওয়েটিং রুম , ডেলিভারি অপারেশন দশম ইত্যাদি সব আগেই দেখিয়ে দেয়া হয় । বিষয়টা গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারব বিষয়টা কত গুরুত্বপূর্ণ । কারণ যে দিন ডেলিভারির ব্যাথা উঠে সেদিন মা এবং বাবা দুজনই খুব উদ্বিগ্ন থাকেন , কোথায় যাবেন , কিভাবে যাবেন সব কিছু মিলিয়ে খুব টেনশনে থাকেন । তাই আগে থেকেই যদি প্র্যাকটিকাল প্ল্যানটি জানা থাকে তাহলে ঐ দিন আর বেশী ঝামেলা পােহাতে হয় না ( টেনশনে ভুগতে হয় না ) । সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার দিন স্কুল জীবনে হুমায়ুন আহমেদের মে ফ্লাওয়ার উপন্যাস থেকে এই বিষয়টি প্রথম জানতে পারি । তখন খুব অবাক লেগেছিল । এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে কারো নেই । আমেরিকা - ক্যানাডায় বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার সময় শিশুর বাবা শিশুর মায়ের হাত ধরে অপারেশন থিয়েটারে বা ডেলিভারি রুমে বসে থাকেন । এর কারণ হচ্ছে মা যে সন্তান ভূমিষ্ট করার জন্য কত কষ্ট করেন তা বাবা হিসেবে স্বামীও যেন কিছুটা বুঝতে পাৱেন । এবার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর সন্তানকে সর্বপ্রথমে বাবার কোলে দেয়া হয় এবং তিনি শিশুর কানে আযান দেন । নতুন শিশুর জন্য গিফট ? একটি আনন্দদায়ক বিষয় হচ্ছে হসপিটালে শিশু যেদিন জন্ম নেয় সেদিন নার্সরা বেবীর জন্য ফুল নিয়ে আসে । পৃথিবীর বড় বড় নাম করা বেবী প্রডাক্টস কোম্পানীগুলাে যেমন , ডাইপার কোম্পানী , বেবী ফুড কোম্পানী , বেবী প্রসাধনী কোম্পানী ইত্যাদি থেকে নানা রকম গিফ্ট সামগ্রী পাঠানাে হয় । একটি ফটোগ্রাফী কোম্পানী শিশুর জন্মের দিন প্রস্তুত থাকে বেবীর নানা ভংগীতে ছবি তােলার জন্য । ব্রেষ্ট ফীডিং ক্লাস ও যদি অনাগত সন্তানটি বাবা মায়ের প্রথম সন্তান হয় তাহলে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ একজন নতুন মায়ের জন্য এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা । এই ব্রেষ্ট ফীডিং - এরও যে নানা উপায় আছে তা না জানলে নবজাতক শিশু হয়তাে ঠিক মতাে দুধ না পেয়ে কষ্ট পাবে । কারণ একটি নবজাতক শিশুর একমাত্র খাদ্য হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ । তাই কানাড়াতে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরপরই প্রতিটি হসপিটালে রয়েছে ব্রেষ্ট ফীডিং - এর জন্য স্পেশাল ক্লাস । এই ক্লাসে প্রতিটি নতুন মা এবং বাবাকে একজন শিক্ষক শিক্ষা । দেন যে কীভাবে শিশুকে ব্রেষ্টফাডিং করাতে হবে । পােষ্ট ন্যাট্যাল ক্লাস  ঃ এই ক্লাসটিও মায়ের জন্য । অর্থাৎ শিশু জন্মের পর এই ক্লাস শুরু করতে হয় । বিশেষ করে যাদের প্রথম বাচ্চা । এই নতুন শিশুকে কিভাবে পরিচর্যা করতে হবে তা নিয়ে সাজানাে হয়েছে এই পােষ্ট নাট্যাল ক্লাসের কার্যক্রম । এটি শিশু জন্মের পর চার মাসের কোর্স । এখানে শেখানাে হয় কিভাবে সদ্যভূমিষ্ট বাচ্চাকে লালন - পালন করতে হবে । এছাড়া বাচ্চা জন্মের পরপর হসপিটাল থেকে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ নার্স বাসায় নিয়মিত পাঠানাে হয় । কারণ একজন নতুন মা হয়তাে অনেক কিছুই জানেন না । যেমন , বাচ্চাকে কীভাবে গােসল করাতে হয় , কীভাবে ডাইপার পরিবর্তন করতে হয় , কীভাবে ব্রেষ্ট ফডিং করতে হয় , কীভাবে অন্যান্য কাজগুলাে করতে হয় ইত্যাদি ডায়েট কোর্স  ঃ এই কোর্সটিও মায়ের জন্য । গর্ভকালীন একজন মায়ের দৈহিক ওজন ১০ থেকে ১৪ কেজি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে । শিশুর মা শিশু জন্মের আগে এক প্রকার খাবার খেয়েছেন জনাের পর তার খাবারের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে । মা যদি ব্যালেন্সড ডায়েট না করেন তাহলে সেখান থেকে নানা প্রকার অসুবিধা হতে পারে , অস্বাভাবিক মােটা হয়ে যেতে পারেন ইত্যাদি । তাই শিশুর জন্মের পর পােষ্ট ন্যাট্যাল ক্লাসের পরপরই এই ডায়েট কোর্সের ব্যবস্থা প্যাটারনিটি লীভ ( ছুটি )  ঃ এই শব্দটি বাংলাদেশে থাকতে কোনদিন শুনিনি । আমরা সবসময় শুনে আসছি ম্যাটারনিটি লীভ অর্থাৎ যে সকল মায়েরা চাকরীজীবী তারা যখন প্রেগন্যান্ট হন এবং শিশুর জন্মের কিছুদিন আগে থেকে ছুটিতে যান সেই ছুটিকে বলে ম্যাটারনিটি লীভ , এই লীভ বাংলাদেশে সাধারণত তিন থেকে ছয় মাস দেয়া হয় । কিন্তু ক্যানাড়াতে মায়েদের জন্য ম্যাটারনিটি । লীভ এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত । প্যাটারনিটি লীভ হচ্ছে বাবাদের জন্য । তারাও শিশুর পরিচর্যার জন্য নতুন মাকে সাহায্য করার জন্য এক থেকে দেড় বছর ছুটি কাটাতে পারেন এবং সেই ছুটিকেই বলে প্যাটারনিটি লীভ । এখানে শিশু পরিচর্যার দায়িত্ব শুধু মায়ের একার নয় , বাবারও । ডে কেয়ার অনেক বাবা - মা দু'জনই হয়তাে চাকরী করেন । তখন তারা বাচ্চাকে ডে কেয়ারে রেখে যান এবং অফিস থেকে ফেরার পথে আবার বাড়ি নিয়ে আসেন । যারা ডে কেয়ার পরিচালনা করেন তাদেরকে অবশ্যই এই বিষয়ের উপর ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি থাকতে হবে । যে চাইলেই এই কাজ করতে পারে না । বেশীরভাগ অমুসলিম ডেকে মুসলিম বাচ্চাদেরকে হালাল খাবার দিয়ে থাকে । এছাড়া আমেরিকা এবং ক্যানাডায় অনেক মুসলিম ডে কেয়ারও রয়েছে । এই ডে কেয়ার থেকে বাচ্চা অনেক কিছু শিক্ষা গ্রহণ করে । বাচ্চার মা - বাবা অনলাইলে বাচ্চাকে সারাদিন দেখতে পারে যে সে ডে কেয়ারে কখন কি করছে । প্রি - স্কুল ও শিশুর বয়স যখন তিন বছর হয় তখন এখানে তাদের জন্য রয়েছে প্রি - স্কুল । শিশুরা প্রাইমারী স্কুলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এক বছর এই প্রি - স্কুলে পড়াশুনা করে । শিশুকে প্রাইমারী স্কুলে যাওয়ার আগে উপযােগী করে এই এক বছরে তৈরী করা হয় । প্রাথমিক পর্যায়ের পড়ালেখা এখানেই শেখানাে হয় । এছাড়া তাকে নানা রকম আদব - কায়দা শেখানাে হয় । যেমন , বই - খাতা গুছিয়ে ব্যাগে ঢুকানাে , কাপড় - চোপড় পরা , জুতা - মােজা পরা , ঠিক মতাে বাথরুম করা , ডাইনিং টেবিলে বসা , খাওয়া - দাওয়া করা , হাত - মুখ ধােয়া , টিশু পেপার ব্যবহার করা , ময়লা - আবর্জনা সঠিক জায়গায় ফেলা ইত্যাদি ইত্যাদি । প্রাইমারী স্কুল ও শিশুর বয়স যখন পাঁচ বছর হয় তখন সে প্রাইমারী স্কুলে যায় । এখানে সে পড়ালেখার পাশাপাশি আরাে অনেক কিছু শেখে । তাদেরকে স্কুল থেকে মাঝেমধ্যে ট্রেনে করে দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয় যেমন , চিড়িয়াখানা , বিভিন্ন রকম মিউজিয়াম , পাবলিক লাইব্রেরী ইত্যাদি । এসব স্কুল ট্রিপে শিশুদেরকে ট্রাফিক আইন - কানুন শেখানাে হয় যে , কীভাবে রাস্তা পারাপার হবে , কোন লাইট জুললে কী করতে হবে ইত্যাদি । আরাে মজার বিষয় হচ্ছে যে , শিশুদেরকে ছােট বয়স থেকেই ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় । তাদেরকে স্কুলের ফিল্ড ট্রিপে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ফায়ারম্যান , ক্যাপ্টেন , ফায়ার ট্রাক ইত্যাদির সাথে সামনাসামনি পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় । পুলিশদের প্রতি শিশুদের সবসময় এক প্রকার কৌতুহল থাকে , তাদের ধারণা পুলিশ সাধারণ মানুষ নয় । তাই শিশুদেরকে পুলিশ অফিসারদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় , শিশুরা পুলিশদের প্রশ্ন করে নানা রকম কৌতূহল মিটায় , পুলিশদের সম্পর্কে তাদের অমূলক ভুল ধারণা থাকলেও তা ভেঙ্গে যায় , তারা পুলিশদেরকে বিপদের বন্ধু মনে করে । এই বিষয়গুলাে আমরা এই কারণে শেয়ার করলাম যে আমাদের দেশেও কি আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য এবং নতুন বাবা - মায়েদের জন্য সিস্টেমগুলাে চালু করতে পারি না ? সকলের উদ্যোগ থাকলে ইনশাআল্লাহ শিঘ্রই বাংলাদেশে প্যারেন্টিং এর উপর সুন্দর সুন্দর ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে ।প্যারেন্টিং অর্গানাইজেশনস এবং ইনষ্টিটিউটস আমেরিকা , কানাডা , ইউরােপ , অষ্ট্রেলিয়া ও সিংগাপুরে প্যারেন্টিংয়ের বিষয়ে অনেক অর্গানাইজেশন এবং ইনষ্টিটিউট রয়েছে । প্যারেন্টিং হচ্ছে একটি সায়েন্স , পৃথিবীর বড় বড় ইউনিভার্সিটি এর উপর গবেষণা করে নানা রকম সমস্যার সমাধান বের করেছে এবং আজও এই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে । প্যারেন্টিং সায়েন্সের উপর বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রিও দেয়া হয় । আজকাল উন্নত দেশগুলােতে কিছু কিছু মুসলিম প্যারেন্টিং অর্গানাইজেশন এবং ইনষ্টিটিউটও হয়েছে । তবে অমুসলিম অর্গানাইজেশন এবং ইনষ্টিটিউটগুলাে এই বিষয়ের উপর অধিক পারদর্শী এবং রিসাের্সে সমৃদ্ধশালী । আমরা যারা প্যারেন্ট তাদের উচিত হবে এই সকল অর্গানাইজেশন এবং ইনষ্টিটিউট থেকে জ্ঞান অর্জন করা এবং তার সাথে ইসলামিক কালচারকে সমন্নয় সাধন করে তা নিজেদের পরিবারে বাস্তবায়ন করা । উন্নত দেশগুলাের টিভিতে প্যারেন্টিং - এর উপর নানা রকম প্রােগ্রাম বা টিভি শাে । দেখানাে হয়ে থাকে । এই অনুষ্ঠানগুলােতে প্যারেন্টিং - এর উপর বিশেষজ্ঞদের অতিথি হিসেবে আনা হয় । তারা প্যারেন্টদের নানা রকম প্রশ্নের উত্তর দেন । এছাড়া আরাে কিছু লাইভ প্রােগ্রামও ধারণ করা হয় যা থেকে প্যারেন্টরা অনেক কিছু শিখতে পারে । যেমন , একটি পরিবারে তিনটি বাচ্চা আছে , তাদের মধ্যে একটি বাচ্চা অন্যরকম , একেবারেই মা - বাবার কথা শুনতে চায় না , পরিবারের সবাইকে অস্থির করে রাখে । একজন বিশেষজ্ঞ মহিলা ন্যানী ( Nanny ) এসে ঐ বাড়িতে কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ থাকে এবং ঐ বাচ্চার সাথে সময় কাটায় । একসময় দেখা যায় যে ঐ বাচ্চার মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে । এই প্রােগ্রামে হিডেন ( লুকানাে ) ক্যামেরা দিয়ে ধারণ করা হয় বাচ্চার কাজকর্ম এবং ন্যানীর সাথে তার এই কয়দিনের সময় কাটানাের নানা রকম অভিজ্ঞতা । অবাক করা কথা এই যে , অমুসলিমদের প্যারেন্টিং - এর অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে , শিশু লালন - পালনের বেশীরভাগ বিষয়গুলােই ইসলামের সুন্নাহভিত্তিক । অমুসলিম বিশেষজ্ঞরা অনেক গবেষণা করে যা আবিষ্কার করেছেন তা ১৪ শত বছর আগেই আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) শিখিয়ে দিয়ে গেছেন ।

প্যারেন্টিং - এর ছয়টি ধাপ এই বইতে আমরা সন্তান প্রতিপালনের ৬ টি ধাপ নিয়ে আলােচনা করেছি । একটি শিশুর জন্মের আগে মায়ের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে সন্তানের জন্ম , তারপর লালন - পালন করে বড় করে বিয়ে - শাদী দেয়া পর্যন্ত সকল বিষয়গুলাে এখানে আলােচনা করা হয়েছে ।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভারতকে দিতে হবে ৮ কোটি টাকা

সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে দই ও মিষ্টি নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক

স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনা